প্রকাশিত: Mon, Jul 3, 2023 11:39 PM
আপডেট: Mon, Jun 30, 2025 1:40 AM

বৈশ্বিক অঙ্গনের পাশাপাশি এই অঞ্চলেও যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষায় ভারতের সঙ্গে কাজ করবে

মাহমুদুল হাসান শিবলী: গত ২১ জুন তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবারের সফরে বাইডেন সরকার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন ভারতের বাজার এবং চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারতকে পাশে পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই নরেন্দ্র মোদিকে এমন অভ্যর্থনা। দিল্লির কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক প্রণয় শর্মা ডয়চে ভেলে’কে বলেন, ‘চীনের কারণে আমেরিকার কাছে ভারত বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে।‘  

তবে মোদির এ সফর ঘিরে এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষেরও অনেক আগ্রহ ছিলো। মোদির সফর-পূর্ববর্তী সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে আলাদাভাবে আলোচনা করবেন কি না। গত ২০ জুন নয়াদিল্লিভিত্তিক হিন্দুস্তান টাইমস-এর এক প্রতিবেদনেও বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে টানাপোড়েন, এ বিষয়ে ভারতের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যকে অস্বীকার করা হয়েছে। 

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো কথা হয়েছে, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। সফরের আগে ঢাকার একটি থিঙ্কট্যাংকের ‘ওয়াশিংটন কানেকশন’ জানিয়েছে যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ওপর ভারতের কোনো ‘লিভারেজ’ নেই। বিষয়টি তাই আলোচনায় আসবে না। আবার আমরা যদি যৌথ বিবৃতি দিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তুকে নির্ধারণ করতে চাই তবে তা সবসময় নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে। এর বাইরেও অনেক আলোচনা হয় যা দু পক্ষই প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। 

তবে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে দুটি তথ্য দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। প্রথমত, বিশদভাবে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থের জন্য ভূমিকা রাখতে দ্বিধা করবে না। দ্বিতীয়ত, স্বার্থগুলো যখন এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পৃক্ত তখন ভারত সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার। বৈশ্বিক অঙ্গনের পাশাপাশি এই অঞ্চলেও যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষায় ভারতের সঙ্গে কাজ করবে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার শাসনামলে আসামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উলফার কাছে ১০ ট্রাক সামরিক অস্ত্র পাচার হচ্ছিল। এটি নিরাপত্তার মূল বিষয়। ওই সাংবাদিক এসব বিষয়ে এবং বিশেষ করে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্যে সমস্যা সৃষ্টি করা উচিত নয়- এমন প্রত্যাশার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিক্রিয়া জানতে চান।

জবাবে বেদান্ত প্যাটেল ভারত ও মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ওঠার কথা নাকচ করেননি। আবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠেছে এমনটিও বলেননি।

বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমি দুটি বিষয় বলব। প্রথমত, বিশদভাবে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থের বিষয় এবং ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করতে এবং ভূমিকা রাখতে দ্বিধা করবে না। তবে বিষয়টি যেহেতু অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমি এ কথাও বলব যে এসব লক্ষ্য অর্জনে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’

সফর পূর্ববর্তী বৈঠকে মূলত সিদ্ধান্ত হয় কী নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করবে, বা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোন বিষয়গুলো থাকবে। আর সে হিসেবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসার সম্ভাবনা ছিলো। কেননা নরেন্দ্র মোদির সফরের আগে  যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জ্যাক সুলিভানকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে ভারতের স্বার্থ বিনষ্ট হয় ও আঞ্চলিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ভারতের এ স্পষ্ট অভিমত বাংলাদেশকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দুই দেশের কূটনৈতিক মহলের খবর।